শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৫

ঋণ করে বিয়ে, শোধ হয়নি এখনো

ঋণ করে বিয়ে, শোধ হয়নি এখনো

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দুই বন্ধুর আলাপচারিতা। একজন আগামী ডিসেম্বরে বিয়ে করবেন, হাতে টাকা পয়সা নেই। জানতে চাইছেন ব্যাংক ঋণ পাওয়া যাবে কি না। অন্য বন্ধু বলছেন তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।

বিয়ের সময় ঝোঁকের বশে ঋণ নিয়ে তিনি কী সীমাহীন দুর্গতিতেই না পড়েছেন। বিয়ের দুই বছর পরও দেনা শোধ হয়নি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের জন্য বিয়ে মানেই সামাজিকতা, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। কিন্তু বিয়ের আংটি থেকে শুরু করে বিয়ের খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত সবকিছুর খরচই কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ানের ফিচার লেখক হ্যাডলি ফ্রিম্যান এক পাঠকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যা কিছু পরতে আরামদায়ক, বিয়েতে তা-ই পরা উচিত। কে কী ভাবল, তা না ভাবলেই চলে। বাংলাদেশে এখনো মধ্যবিত্তরা বিয়ের অনুষ্ঠান করেন জাঁকজমকের সঙ্গে। সাময়িকভাবে অর্থ জোগান দিতে ব্যাংক রয়েছে। বেশ কিছু ব্যাংক এক থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে, কিন্তু সে জন্য গুনতে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ সুদ। তাঁরা কী আদৌ চীনের পথ বা হ্যাডলি ফ্রিম্যানের পরামর্শ নেবেন?

গত ১০ বছরে বাংলাদেশে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় মানুষের যেমন নাভিশ্বাস উঠেছে, তেমনি বিয়ের খরচ সামাল দিতে গিয়ে সদ্যবিবাহিতরা পড়ছেন বিপদে। অনেকে অফিস থেকে আগাম বেতন তুলে নিচ্ছেন, কেউ কেউ নিচ্ছেন ব্যাংক ঋণ। তারপর ঋণ শুধতে গিয়ে হচ্ছেন গলদঘর্ম তাঁরা। একজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘একটু জাঁকজমক করে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম বলে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা ঋণ নিলাম। বিয়ের পর খাওয়া-দাওয়া, বাড়িভাড়া, ঘোরাফেরায় কত খরচ হবে—এমন একটা হিসাবও করে ফেললাম। কিন্তু প্রতি মাসেই বাজেট ফেল। এ মাসে পানির কল নষ্ট, তো ও মাসে বিদ্যুত্ বিল বেশি আসে, পরের মাসে হয়তো কিনতে হলো জন্মদিন বা বিয়ের উপহার।’ কোনো দিকে আর কূল দেওয়া যায় না।

কোথায় কত বাড়ল গত ১০ বছরে বিয়ের প্রধান অনুষঙ্গ সোনার গয়নার দাম বেড়েছে। এই বাড়ার হার আট গুণেরও বেশি। তবু সামাজিকতা করতে হয় বলে কোনো না কোনোভাবে মানুষ গয়নার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘একটি বিয়েতে পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার দিলে বছর দশেক আগে ৫০ হাজার টাকার কম খরচ হতো। এখন ওই গয়না দিতে খরচ হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। মুখ রক্ষার জন্য অভিভাবকেরা এর ব্যবস্থা করেন। গয়নার পাশাপাশি বেড়েছে শাড়ির দাম। বেনারসিপল্লির শাড়ি বিক্রেতারা বলেন, মধ্যবিত্তরা যে ধরনের শাড়ি কেনেন বিয়েতে, তার দাম ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বেড়েছে খাবারের খরচ আর কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়াও। পল্টনের ‘আনন্দ ভবন’ কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপক কামাল হাসান জানান, আট-দশ বছর আগে ২০০ অতিথির জন্য অনুষ্ঠান করতে খরচ হতো ২৫ হাজার টাকা, এখন খরচ পড়ছে ৪৬ হাজার টাকা। আর খাবারের খরচও হয়েছে দ্বিগুণ। ওই কমিউনিটি সেন্টারের বাবুর্চি মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, ১০০ জনের খাওয়ার খরচ ৩০-৩৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০-৫৫ হাজার টাকা।

মুক্তির উপায় কী বিয়ের খরচ নিয়ে বাংলাদেশের মতো ভুগছেন চীনের নাগরিকেরাও। তাঁরা এখন সমাধান খুঁজছেন। এ বছরের জুনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনের ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডের চেয়ারম্যান ফেং লুই বলেন, ‘বিয়েতে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করাটা একটা বোকামি। যে টাকাটা খরচ হচ্ছে, সেটা জমিয়ে রেখে পরবর্তী সময়ে একটা বাড়ি করা, ইনস্যুরেন্স করা কিংবা বুড়ো বয়সের জন্য স্রেফ জমিয়ে রাখা যায়।’ চীনের লোকজন এখন নতুন ধরনের পরিকল্পনা করছে বিয়ে নিয়ে। অনেকে বিয়েটা নিবন্ধন করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছোটখাটো পার্টি দিচ্ছেন, মেন্যু থেকে দামি সব খাবার বাদ দিয়ে সুস্বাদু কিন্তু কম খরচের খাবারের দিকে ঝুঁকছেন।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024