শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১০

লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিশাল সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ২৬, গ্রেপ্তার ২৫

লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিশাল সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ২৬, গ্রেপ্তার ২৫

লন্ডনে অধিকারকর্মী টমি রবিনসনের নেতৃত্বে শনিবার এক বিশাল অভিবাসন বিরোধী সমাবেশ হয়েছে। সেখানে ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ জড়ো হন।

এক পর্যায়ে টমি রবিনসনের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকজন সমর্থককে কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ঘুষি, লাথি ও বোতল ছুড়তে দেখা যায়।

এ বিষয়ে খবরে বলা হয়েছে, ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে কমপক্ষে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মানুষ তাদের বৈধ অধিকার প্রয়োগের জন্য এসেছিলো। তবে অনেকে সেখানে সহিংতা সৃষ্টির জন্যও আসে। তারা কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করে।

রবিনসনের আসল নাম হলো ইয়াক্সেল লেনন। তিনি দ্য ন্যসনালিস্ট ও অ্যান্টি ইসলাম ইংলিশ ডিফেন্স লীগের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া ব্রিটেনের অন্যতম প্রভাবশালী ডানপন্থী নেতা।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই মিছিলে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হন। রবিনসন জনসম্মুখে বলেন, অভিবাসীদের এখন ব্রিটিশ নাগরিকদের থেকে বেশি অধিকার আছে।

লন্ডনের সেন্ট্রাল এলাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল অভিবাসনবিরোধী সমাবেশে ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা পদযাত্রা করেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত অন্যতম বৃহত্তম ডানপন্থি বিক্ষোভ হিসেবে একে বিবেচনা করা হচ্ছে।

মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ডানপন্থি কর্মী টমি রবিনসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক এই পদযাত্রায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। বিপরীতে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ শীর্ষক পাল্টা সমাবেশে প্রায় ৫ হাজার মানুষ যোগ দেন।

সমাবেশে দেশজুড়ে মানুষ ট্রেন ও বাসে করে লন্ডনে আসেন। শুরুতে এটিকে ‘বাকস্বাধীনতার উৎসব’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হলেও সমাবেশ দ্রুত বর্ণবাদী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণা-ভাষণে রূপ নেয়।

পুলিশের ধারণার চেয়েও বেশি মানুষ অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তীব্র সহিংসতার শিকার হয়। পুলিশের ওপর লাথি, ঘুষি, বোতল, ফ্লেয়ার ও বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করা হয়।

ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সমাবেশে যোগ দিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি রবিনসনসহ অন্যান্য কট্টর ডানপন্থি নেতাদের সমর্থন দেন এবং অভিযোগ করেন যে, ব্রিটিশ জনগণ এখন আর তাদের বাকস্বাধীনতা প্রয়োগে নিরাপদ বোধ করছেন না।

তিনি বলেন, ব্রিটেনের ক্ষয় এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আগে এটি ছিল ধীর প্রক্রিয়া, কিন্তু ব্যাপক ও নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন এর ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফরাসি কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিবিদ এরিক জেমুরও। তিনি দাবি করেন, দক্ষিণ ও মুসলিম সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে ইউরোপীয় জনসংখ্যার প্রতিস্থাপন ঘটছে। আমাদের প্রাক্তন উপনিবেশগুলো এখন আমাদেরকেই উপনিবেশে পরিণত করছে।

বিক্ষোভকারীরা এ সময় অভিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হোটেলের বাইরেও সমাবেশ করেন। তাদের হাতে ছিল ইউনিয়ন পতাকা, সেন্ট জর্জ ক্রসের লাল-সাদা পতাকা, পাশাপাশি মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা।

অনেকেই মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ক্যাপ পরে ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লিখে আনেন—’ওদের বাড়ি ফেরত পাঠাও।’

সমাবেশে একটি গান গাওয়া হয়, যার কথায় ছিল, পশ্চিমকে মধ্যপ্রাচ্যের মতো করে তোলা হচ্ছে। পরে মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট ও ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শিত হলে জনতা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রতিটি পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হলে বিক্ষোভকারীরা উল্লাস প্রকাশ করে।

রবিনসন মঞ্চে উঠে ঘোষণা দেন, ব্রিটেন অবশেষে জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন কোনোদিন শেষ হবে না। তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের অনিয়ম উন্মোচনকারী সাংবাদিক হিসেবে দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।

সমাবেশে যোগ দেওয়া এক সমর্থক সান্ড্রা মিচেল বলেন, তাদেরকে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে পাল্টা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষক বেন হেচিন মন্তব্য করেন, ‘ঘৃণার ধারণা আমাদের বিভক্ত করছে। আমরা যত বেশি মানুষকে স্বাগত জানাব, দেশ হিসেবে আমরা তত শক্তিশালী হব।

উল্লেখ্য, অভিবাসন এখন ব্রিটেনের রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগকেও ছাপিয়ে গেছে এ বিতর্ক। চলতি বছর এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন, যা রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025