লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক প্রয়াত ধনকুবেরের সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাদ চলছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছিল। তবে হাইকোর্টের রায়ের পর চলতি বছর শেষদিকে এর ওপর আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিষয়টির অবসান হতে পারে।
২০০৮ সালে যখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী আব্দুল মুবিন খান কোনও উইল না করেই মারা গেলে সম্পদ ভাগ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তিনি রেস্তোরাঁ ব্যবসা থেকে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছিলেন এবং লন্ডনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সম্পত্তি কিনেছিলেন।
১৪ স্টেপলটন রোড, ৭ এসেক্স গ্রোভ, ৫৩ নরবারি ক্রেসেন্ট এবং ৫ উলসওয়াটার রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তার সম্পত্তি ছিল। কোনও আনুষ্ঠানিক উইল না থাকায় সম্পদের অধিকার নিয়ে বিবাদ শুরু হয়।
মামলার বাদী পাঁচ ভাইবোন—আহমেদ, সারোয়ার, শালিমা, ফারহানা এবং জেনিফার খান—দাবি করেন, তাদের বাবার ইচ্ছা ছিল সম্পত্তিগুলো ছয় সন্তানের সবার সুবিধার জন্য একটি সাধারণ ট্রাস্টের অধীনে থাকবে। তারা বলেন, পরিবারের মধ্যে একটি যৌথ বোঝাপড়া ছিল যে সম্পত্তিগুলো বড় ভাই পরিচালনা করলেও এর একক মালিক তিনি নন।
অন্যদিকে, মামলার বিবাদী মুহাম্মদ খান বলেন, বড় ছেলে হিসেবে তিনিই এই সম্পত্তির একমাত্র বৈধ মালিক। তিনি দাবি করেন, সম্পত্তিগুলো তার কাছে সরাসরি হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং এর ওপর ভাইবোনদের কোনও অধিকার নেই।
২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর হাইকোর্ট বাদীর পক্ষে রায় দেন। ই-মেইল, আর্থিক রেকর্ড এবং একজন বন্ধকি দালালের সাক্ষ্যসহ বিভিন্ন প্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে আদালত দেখতে পান যে, মুহাম্মদ খানের ব্যাখ্যাগুলো অগ্রহণযোগ্য ছিল এবং পরিবারের আচরণ ও যোগাযোগের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, সম্পত্তিগুলো প্রকৃতপক্ষে ভাইবোনদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই রাখা হয়েছিল। এই রায়ে পাঁচ ভাইবোনকে তাদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয় এবং বড় সন্তানকে তার বাবার মৃত্যুর পর থেকে পাওয়া সমস্ত ভাড়া ও বন্ধকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিলের হিসাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে আইনি লড়াই এখানেই শেষ হয়নি। মুহাম্মদ খান এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। আপিল আদালতে মামলাটির শুনানি আগামী ২৮ বা ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই আসন্ন শুনানি পরিবারটির এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা বিবাদের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সুযোগ করে দেবে।
Leave a Reply