যুক্তরাজ্যের পারিবারিক অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং এর মানবিক প্রভাব তুলে ধরেছেন এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি নারী। তিনি জানান, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেও বাংলাদেশে বসবাসরত স্বামীকে যুক্তরাজ্যে আনার জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম আয়ের শর্ত পূরণ করতে পারছেন না।
গ্লাসগোর ২২ বছর বয়সী ডেমি আক্তার ২০১৮ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। ওই সময় তার পরিচয় হয় বাংলাদেশে বসবাসরত ২৪ বছর বয়সী আলামিনের সঙ্গে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে তাদের যোগাযোগ বাড়ে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ডেমি আক্তার নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন এবং একসঙ্গে সরসার করার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাজ্যে তার স্বামীর স্পাউস ভিসার জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম আয়ের শর্ত।
২০২৪ সালের এপ্রিলে ব্রিটিশ সরকার এই সীমা ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ২৯ হাজার পাউন্ড করেছে। এর ফলে তরুণ এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে।
এই নতুন শর্ত পূরণের জন্য ডেমি আক্তার গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন, আর্ট এবং ডিজাইন বিষয়ে তার ডিগ্রি এক বছর আগেই ছেড়ে দিয়ে পূর্ণকালীন চাকরি শুরু করার কঠিন সিদ্ধান্ত নেন।
আক্তার বলেন, আমি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা কাজ করেও ২৯ হাজার পাউন্ড থেকে প্রায় ৪০০ পাউন্ড কম উপার্জন করছিলাম। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা অত্যন্ত ক্লান্তিকর। অনেক সময় ১৫ ঘণ্টার শিফট করতে হয়। এত কম বয়সে এবং ন্যূনতম মজুরিতে এটি খুবই কঠিন।
আক্তার ও তার স্বামীর গল্পটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মাইগ্রেশন অবজারভেটরি’র অনুমান, এই নীতির কারণে হাজার হাজার পরিবার একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
২০২৪ সালের শেষের দিকে প্রকাশিত মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি’র একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২৯ হাজার পাউন্ডের এই সীমাটি অন্যান্য উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
পার্লামেন্টের একটি গবেষণা ব্রিফিং থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক কর্মচারী বছরে ২৯ হাজার পাউন্ডের কম উপার্জন করেন, যা থেকে স্পষ্ট যে বিপুল সংখ্যক ব্রিটিশ নাগরিক তাদের বিদেশি সঙ্গীর স্পনসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক যোগ্যতা অর্জন করতে অক্ষম।
আক্তার জানান, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, ক্রিসমাস এবং ইস্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে একসঙ্গে না থাকা।
তিনি আরও বলেন, একা একা স্বাস্থ্যগত সমস্যা, এমনকি গর্ভপাতের মতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা তার জন্য খুব কষ্টকর ছিল।
স্বামীকে দেখতে আক্তারকে বারবার বাংলাদেশে যেতে হয়েছে কারণ আলামিনের দুটি ভিজিট ভিসার আবেদন বাতিল হয়েছে। আক্তার বলেন, আমি প্রতি ছয় থেকে আট সপ্তাহ অন্তর যতবার সম্ভব, কর্ম বিরতি নিয়ে বা বার্ষিক ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করি।
দুঃখজনক হলেও, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এমন কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ভিসা মঞ্জুর করে থাকে, যেখানে প্রত্যাখ্যানের ফলে পরিবারের জন্য অগ্রহণযোগ্য কঠোর পরিণতি ঘটতে পারে। তবে এই পথটি জটিল এবং এর জন্য অনেক প্রমাণ প্রয়োজন হয়।
রিইউনাইট ফ্যামিলিজ ইউকে’র মতো দাতব্য সংস্থাগুলো এই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্যারোলিন রেইড বলেছেন যে, এমআইআর নিয়মটি তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের ওপর একটি বাধা।
এই দাতব্য সংস্থাটি আরও মানবিক এবং সহানুভূতিশীল পারিবারিক অভিবাসন নীতির জন্য কাজ করছে।
Leave a Reply